আজ ৬ ডিসেম্বর: বাবরি মসজিদ ধ্বংসের দিন এবং সাম্প্রদায়িকতার ইতিহাসের এক করুণ অধ্যায়

ছবি: ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ

৬ ডিসেম্বর, ১৯৯২—ভারতের ইতিহাসে এক কলঙ্কিত দিন। বিজেপির উস্কানিতে উগ্র শিবসেনাদের হাতে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় অযোধ্যার ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ। বর্তমানে সেই জায়গায় নির্মিত হয়েছে একটি মন্দির, যা ভারত সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে উঠেছে। এ ঘটনা সাম্প্রদায়িক বিভাজনের এক জ্বলন্ত উদাহরণ হয়ে রয়েছে।

এই ধ্বংসযজ্ঞের প্রথমসারির একজন ছিলেন বলবীর সিং। শাবল দিয়ে বাবরি মসজিদ ভাঙার কাজ শুরু করেছিলেন তিনি। ধ্বংসপ্রাপ্ত মসজিদের দুটি ইট শিবসেনার কার্যালয়ে জমা দিয়ে সম্মাননা পেয়েছিলেন। সেখানে পুষ্পমাল্য দিয়ে তাকে বরণ করা হয়েছিল।

কিন্তু পৃথিবী বড় বিচিত্র। সেই বলবীর সিং-ই পরে মোহাম্মদ আমির নামে পরিচিত হন। ধর্মান্তরিত হয়ে তিনি এক ধর্মপ্রাণ মুসলিমে পরিণত হন। বলবীরের পরিবার ছিল রাজপুত ঘরানার। তার বাবা উদারপন্থী ছিলেন এবং মসজিদ ধ্বংসের মতো ঘৃণ্য কাজ সমর্থন করতে পারেননি। এ ঘটনায় তিনি ছেলের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করেন।

অনুতপ্ত জীবন এবং ইসলাম গ্রহণ
বলবীর সিং ঘরছাড়া হয়ে বৈরাগী জীবন শুরু করেন। একসময় তীব্র অনুশোচনায় আক্রান্ত হন এবং জানতে পারেন, মসজিদ ধ্বংসের দলে থাকা তার বাল্যবন্ধু যোগেন্দ্রপালও ইসলাম গ্রহণ করেছেন। এরপর তিনি নিজেও ইসলাম গ্রহণ করেন। মসজিদ ভাঙার পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে তিনি নতুন মসজিদ নির্মাণ ও মেরামতের কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেন। জীবনে অন্তত ১০০টি মসজিদ নির্মাণ ও সংস্কারে সহায়তা করেন তিনি। ২০২১ সালে তার মৃত্যু হয়।

ঐশ্বরিক হেদায়েতের উদাহরণ
আল্লাহর অসীম কুদরতে যিনি একসময় মসজিদ ধ্বংস করেছিলেন, তিনিই পরে মসজিদের খেদমতে নিজেকে উৎসর্গ করেন। ইতিহাস সাক্ষী দেয়, যেমন উমর (রা.) রাসূল (সা.)-কে হত্যা করতে উদ্যত হয়েছিলেন, কিন্তু পরে তাঁর অন্যতম ঘনিষ্ঠ অনুসারী হয়ে ওঠেন।

এসব ঘটনা কখনো জোরপূর্বক ঘটানো সম্ভব নয়। এটি কেবল আল্লাহর হেদায়েতের ফল। কিন্তু অনেকেই এই খোদাপ্রদত্ত রহমতের গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারেন না এবং এমন কথা বা কাজ করেন যা অন্যদের বিব্রত ও বিরক্ত করে। ধর্ম কখনো চাপিয়ে দেওয়া যায় না; এটি আল্লাহর হাতে।

৬ ডিসেম্বরের স্মৃতিচারণা
বাবরি মসজিদের স্মৃতি হয়তো বইপত্র বা আলোচনার টেবিল থেকে মুছে ফেলা হবে, কিন্তু ৬ ডিসেম্বরের এই দিনটি আমাদের কাছে ইতিহাসের অংশ। আমাদের প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে এ ইতিহাস সংরক্ষণ করা উচিত।

বিচারহীন ঘৃণার বিষবাষ্প ছড়িয়ে যে দেশ সাম্প্রদায়িক বিভাজনকে কেন্দ্র করে রাজনীতি করে, সেই দেশই আবার বাংলাদেশকে মানবিকতার শিক্ষা দিতে আসে—এটি ভীষণ অবাক করে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন