কুষ্টিয়ায় ইমাম বহিষ্কার ইস্যুতে ব্যাপক উত্তেজনা; নতুন কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত

কুষ্টিয়ার কুমারখালি উপজেলার নন্দলালপুর ইউনিয়নের সোন্দাহ গ্রামে অবস্থিত বায়তুল হামদ জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা মিনহাজুল আদনানকে বহিষ্কারের ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। মসজিদ কমিটির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ ও ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের প্রতিবাদে পুরো এলাকা সরব।

এর আগে, মাওলানা মিনহাজুল আদনান হাফিজাহুল্লাহ দীর্ঘদিন ধরে জুমার খুতবায় ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিভিন্ন সমসাময়িক সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয়ে আলোচনা করতেন। এতে তিনি তাওহীদ, তাগুত এবং বিশ্ব রাজনীতির বিভিন্ন প্রসঙ্গ তুলে ধরতেন। তবে তার এসব আলোচনা ও কার্যক্রম মসজিদ কমিটির কিছু সদস্যের বিরাগভাজন হয়।

মসজিদ কমিটির অভিযোগ অনুযায়ী,
  • ইমাম সাহেব তার খুতবা ও আলোচনা দিয়ে রাজনৈতিক বিষয় টেনে আনেন।
  • এলাকার যুবকদের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক কমিটির কয়েকজন সদস্যের কাছে হুমকি হিসেবে বিবেচিত হয়।
  • জুমার পর একটি তাফসির মাহফিলের ঘোষণা দেওয়া নিয়ে কমিটির সঙ্গে তার বাকবিতণ্ডা হয়।

বহিষ্কারের পেছনে মূল ভূমিকা রাখেন মসজিদ কমিটির সহ-সভাপতি আজিজুর রহমান শাকের বিশ্বাস, সেক্রেটারি হামিদ বিশ্বাস, এবং ক্যাশিয়ার শামসের। এলাকাবাসীর ভাষ্যমতে, এদের মধ্যে দুইজন দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত এবং অপরজন কুমারখালি উপজেলা জামাত ইসলামী দলের সেক্রেটারি।

জনপ্রতিরোধ ও কমিটি বিলুপ্তি
মাওলানা আদনানকে বহিষ্কারের পর আজ (১ ডিসেম্বর ২০২৪) বাদ জোহর এলাকাবাসীর উদ্যোগে মসজিদ প্রাঙ্গণে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় মুরব্বি, তরুণ-যুবক এবং কুষ্টিয়া ও কুমারখালির বিভিন্ন এলাকার ওলামায়ে কেরাম।

বৈঠকে নিম্নলিখিত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়:
১. মসজিদ কমিটির সভাপতি পদত্যাগ করেন এবং কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।
২. অভিযুক্তদের এলাকাবাসীর সামনে ইমাম সাহেবের কাছে ক্ষমা চাইতে বলা হয়। ক্ষমা না চাইলে তাদের সামাজিকভাবে বয়কটের ঘোষণা দেওয়া হয়।
৩. নতুন কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
৪. ইমাম মিনহাজুল আদনানকে পুনরায় তার দায়িত্বে বহাল থাকার অনুরোধ জানানো হয়। তবে তিনি জানান, নতুন কমিটি গঠনের পর তার সঙ্গে আলোচনা করতে হবে।

ইমাম সাহেবের প্রতিক্রিয়া
মাওলানা মিনহাজুল আদনান তার বহিষ্কার প্রসঙ্গে বলেন, "আমি সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করেছি। যদি আল্লাহ তাআলা আমাকে পুনরায় সুযোগ দেন, তবে আমি একইভাবে দ্বীনের দাওয়াতের কাজ চালিয়ে যাব।"


উল্লেখিত ঘটনার মাধ্যমে দেশের অন্যান্য মসজিদের ইমামদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপিত হলো। সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে যারা চাপের মুখে থাকেন, তাদের সাহস জোগাতে মিনহাজুল আদনানের অবস্থান অনুপ্রেরণার একটি গল্প হয়ে থাকবে।

এলাকার সাধারণ মানুষ, তরুণ প্রজন্ম ও ওলামায়ে কেরামের দৃঢ় অবস্থান প্রমাণ করে, ঈমানের দাবি থেকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে জনগণ সবসময় ঐক্যবদ্ধ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন