বাংলাদেশের কাছে প্রায় ১০ হাজার ৮৬ কোটি টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া: একটি ইউনিট বন্ধ করে দিল আদানি

ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের গড্ডায় অবস্থিত আদানি গ্রুপের বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুটি ইউনিটের একটি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ বাবদ প্রায় ১০ হাজার ৮৬ কোটি টাকা বকেয়া থাকায় আদানি গ্রুপ ইতোমধ্যেই বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেক কমিয়ে দিয়েছে। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) দেশের জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের একমাত্র রাষ্ট্রীয় সংস্থা হিসেবে এই পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

adani

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, আদানি গ্রুপের বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিট শুধুমাত্র বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রপ্তানির জন্য নিবেদিত, যার উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ৭৫০ মেগাওয়াট। বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) এই ইউনিটটি থেকে কোনো বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়নি, এবং সেদিন আদানি গ্রুপ গড়ে মাত্র ৫৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করেছে, যা গত বুধবার পর্যন্ত দিনে গড়ে এক হাজার মেগাওয়াটের বেশি ছিল। এই প্রথমবারের মতো বকেয়া বিলের কারণে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধের ঘটনা ঘটল আদানির পক্ষ থেকে। প্রতিষ্ঠানটি ৭ নভেম্বরের মধ্যে অর্থ পরিশোধ না হলে অবশিষ্ট ইউনিটও বন্ধ করার হুঁশিয়ারি দিয়েছে।


দেশীয় কয়লাভিত্তিক তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্র—এস আলম গ্রুপের বাঁশখালী, বাংলাদেশ-ভারত যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত পায়রা, এবং রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র—তেও বিদ্যুৎ উৎপাদন কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ সরবরাহে এক হাজার মেগাওয়াটের বেশি ঘাটতি দেখা দিয়েছে।


আদানির পক্ষে এম আর কৃষ্ণ রাও বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে (বিপিডিসি) একটি চিঠিতে জানান, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক থেকে প্রয়োজনীয় এলসি না পেয়ে ও ৮৪৬ মিলিয়ন ডলার বকেয়া পরিশোধ না করার কারণে পাওয়ার পারচেজ অ্যাগ্রিমেন্টের আওতায় ম্যাটারিয়াল ডিফল্ট ঘটেছে। আদানি গ্রুপের দাবি, সময়মতো এলসি না দেওয়ার কারণে কয়লা সরবরাহ ও অপারেশন কন্ট্রাক্টরদের অর্থায়ন সংক্রান্ত সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে।


এদিকে এস আলম গ্রুপের বাঁশখালী পাওয়ার প্লান্টেরও বিপিডিসির কাছে ২ হাজার কোটি টাকার বকেয়া রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক তান ঝেলিং একটি চিঠিতে উল্লেখ করেন, বকেয়া পরিশোধ না হলে সরবরাহকারীদের জন্য এলসি জারি করা সম্ভব হবে না, যা বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু রাখতে প্রয়োজন।


পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এম খোরশেদুল আলমও বকেয়া পাওনার কথা উল্লেখ করেছেন। প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে পাঁচ হাজার ৮০০ কোটি টাকার বকেয়ার কারণে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।


বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৭ হাজার মেগাওয়াট হলেও দেশের বিদ্যুতের চাহিদা গড়ে ১৩ থেকে ১৪ হাজার মেগাওয়াট। এই পরিস্থিতি দ্রুত সমাধান না হলে দেশের বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থায় আরও সঙ্কট দেখা দিতে পারে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন