শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচন হবে নাঃ মির্জা ফখরুল ইসলাম


“আমাদের কথা পরিষ্কার, পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিচ্ছি, শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচন হবে না -মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

আওয়ামী লীগ সরকার ‘২০১৪ ও ২০১৮ সালে ভোট চুরি করেছে’ এবং একইভাবে আবার ক্ষমতায় থাকার জন্য ‘নতুন সব বুদ্ধি আঁটছে’ বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, “কিন্ত আমাদের কথা পরিষ্কার, পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিচ্ছি, শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচন হবে না। আপনাকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ ভেঙে দিতে হবে।

"নিরপেক্ষ বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা দিতে হবে। সেই সরকার নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করবে। সেই নির্বাচন কমিশন নির্বাচন করবে, জনগণ তার সরকার নির্বাচন করবে।”

শনিবার বিকালে বরিশাল নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানে বিভাগীয় গণসমাবেশে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।

এই বিভাগীয় সমাবেশকে কেন্দ্র করে শুক্রবার সকাল থেকেই ধর্মঘটের ডাক দেন পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা।

ধর্মঘটের কারণে বরিশালে লঞ্চ, বাস, মাইক্রোবাস ও তিন চাকার যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। একপর্যায়ে বন্ধ করে দেওয়া হয় খেয়া পারাপারও।

এতে সমাবেশগামী বিএনপি নেতাকর্মীরা ছাড়াও সাধারণ মানুষ ব্যাপক ভোগান্তির মধ্যে পড়েন।

কোথাও কোথাও সমাবেশগামী পরিবহনে হামলা ও বাধা দেওয়ার অভিযোগ করেছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। এর মধ্যেও নেতাকর্মীরা এক-দুদিন আগেই বরিশাল নগরীতে এসে জড়ো হতে থাকেন।

বিভাগের ছয় জেলা থেকে আসা নেতাকর্মীদের ভীড়ে আগের রাতেই বঙ্গবন্ধু উদ্যানের একটি অংশ পূর্ণ হয়ে যায়। মাঠে চাটাই বিছিয়ে তারা রাতযাপন করেন। রাতেই সেখানে সমাবেশের আমেজ তৈরি হয়।

শনিবার সকাল থেকে নেতাকর্মীরা ছোট ছোট মিছিল নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে উদ্যানমুখী হয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সমাবেশস্থল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে নেতা-কর্মীরা আশপাশের সড়কে অবস্থান নেয়।

বেলা ১১টায় কোরআন তেলওয়াত, দোয়া মোনাজাত ও জাতীয় সংগীতের মর্ধ দিয়ে গণসমাবেশের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়।

বিকালে সরকারের সমালোচনা করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, “ছোটবেলায় মা আমাদের ঘুম পাড়াতেন বর্গীদের গান শুনিয়ে। বর্গীরা ছিল এমন ভয়ানক দস্যু; তারা সব লুট করে নিয়ে যেত। ক্ষেতের ধান লুট করতো। তাদের মানুষ ভয় পেত।"

আজকের এ আওয়ামী লীগ বর্গীর রূপ নিয়েছে," অভিযোগ করেন তিনি।

দেশের ৪২ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে, দেশ এখন ৩০ শতাংশ খাদ্যের সংকট রয়েছে- মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, “এ থেকে আমরা মুক্তি চাই, পরিত্রাণ চাই। তাই আমরা চাই টেকসই বাংলাদেশ।

"আমাদের এই আন্দোলন বিএনপির জন্য নয়, খালেদা জিয়ার জন্য নয়, তারেক রহমানের জন্য নয় কিংবা আমাদের নেতাদের জন্য নয়; এই আন্দোলন জাতি ও দেশের প্রয়োজনে সমগ্র জাতিকে রক্ষা করার জন্য।”

আওয়ামী লীগের আমলে কত টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে তার হিসাব বিএনপি নেতারা দিয়েছেন দাবি করে বিএনপি মহাসচিবের আরও অভিযোগ, "আওয়ামী লীগ সরকার সমস্ত টাকা পাচার করে বিদেশে নিয়ে যাচ্ছে। কানাডা, মালয়েশিয়া আর নিউইয়র্কে বাড়ি বানানো হচ্ছে। এখন তারা বৈশ্বিক সংকট, ডলার সংকটের পেছনে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কথা বলছে।"

লোডশেডিং ও বিদ্যুৎ সংকট নিয়ে তিনি বলেন, “বিদ্যুৎ নিয়ে খুব ঢাকঢোল পিটিয়ে ছিলেন। এমনভাবে ঢাকঢোল পেটালো যে, বিদ্যুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে গেছি। ওই যে হাতিরঝিল আছে না, সেখানে আতশবাজি ফুটিয়েছিলেন। সেই বিদ্যুৎ এখন আর নেই।”

“এরা এই বিদ্যুতে চুরি করেছে। হাজার হাজার কোটি টাকা চুরি করেছে। কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট করে, যেসব ক্যাপাসিটির দরকার নেই, সেইসব চার্জ দিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে। একটা জায়াগা নেই, একটা ক্ষেত্র নেই যেখানে তারা চুরি করেনি। প্রত্যেক জায়গায় চুরি আর ঘুষ ছাড়া কিছু নেই,“ সরকারের ধারাবাহিক সমালোচনার মধ্যে সমাবেশে এসব অভিযোগ তুলে ধরেন তিনি।

চালের দাম বাড়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, “মনে পড়ে, নির্বাচনের সময় মাথায় হিজাব দিয়ে বলেছিলেন, ১০ টাকায় চাল খাওয়াব। কত টাকায় খাওয়াচ্ছে এখন? ঘরে ঘরে চাকরি দেবে বলেছিল। একটা ছেলেকেও চাকরি দিয়েছে?

"শুধু আওয়ামী লীগের ছেলেদের চাকরি দিয়েছে। ২০ লাখ টাকার বিনিময়ে চাকরি দিয়েছে। বিনা পয়সায় সার দেব বলেছিল। কিন্তু সেই সার আমাদের সময়ের চেয়ে এখন তিনগুণ বেশি দিয়ে কৃষককে কিনতে হচ্ছে।” 

“আওয়ামী লীগ সব ধ্বংস করে দিয়েছে”

বিএনপির মহাসচিব ফখরুল বলেন, “প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে এই দেশকে মুক্ত করার জন্য যুদ্ধের সূচনা করেছিলেন। ৭ নভেম্বরের সিপাহী-জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে নতুন একটা বাংলাদেশ গড়বার স্বপ্ন দেখেছিলেন।

"আর এই আওয়ামী লীগ সেই স্বপ্নকে ধ্বংস করে দিয়েছে। আমাদের সব আশা আকাঙ্ক্ষাকে তারা চুরমার করে দিয়েছে।”

“আমাদের স্বপ্ন ছিল একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, একটা মুক্তচিন্তার দেশ। একটা সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্ন ছিল আমাদের। কিন্তু এই আওয়ামী লীগ সব ধ্বংস করে দিয়েছে। আওয়ামী লীগ একে একে আমাদের সমস্ত অর্জনগুলো ধ্বংস করেছে। তারা অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে, রাজনীতিকে ধ্বংস করেছে।”

বিএনপি বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাসী দাবি করে তিনি বলেন, “আমরা বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাসী, সংবিধানে তাই ছিল। কিন্তু তারা ১৯৭৫ সালে একদলীয় সরকার ব্যবস্থা কায়েম করলো। আবার এখন এই ১৫ বছর ধরে একই স্বপ্ন তারা দেখছে। তারা এখানে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করতে চায়। শুধু একটা খোলস, একটা মোড়ক রাখতে চায় গণতন্ত্রের।”

বরিশাল মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খান ফারুকের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, আব্দুল মঈন খান ও সেলিমা রহমান, যুগ্ম মহাসচিব হাবিবুর নবী খান সোহেল, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার, ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আবদুল আউয়াল মিন্টু, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম, শাহজাহান ওমর বীর উত্তম।

- প্রেস রিলিজ/ বিএনপি

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন